(১২০০+ শব্দের))বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনা। বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা রচনা pdf
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনা (১২০০+ শব্দের)- আসসালামু আলাইকুম শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমাদের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনাটি সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা হলো।
তোমরা যারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনাটি খুঁজছিলে কিন্তু ভালো কোন রচনা খুজে পাচ্ছিলে না। তাদের জন্য সহজ এবং গুছানো ভাবে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনা নিয়ে এসেছি তাছাড়া তুমরা এখান থেকে বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা রচনা pdf টিও পেয়ে যাবে। এই রচনাটি আপনি নিচের শিরোনাম ব্যবহার করেও লিখতে পারবেন।
*বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা রচনা pdf
*বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনা
*বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা
বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা রচনা- pdf here
Pdf এর পাসওয়ার্ড একটু নিচের দিকে স্ক্রল ক্রলে পেয়ে যাবেন।
ভূমিকাঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম অর্জন। আর এই স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে যাঁর নাম চিরস্মরণীয় হয়ে আছে, তিনি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জীবনের শুরু থেকেই তিনি ছিলেন আপসহীন ও নির্ভীক এক সংগ্রামী নেতা। ১৯৪৭ সালে পাকিস্থান সৃষ্টির অল্পকাল পরেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে বৈষম্য আর পরাধীনতার গ্লানি। ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে এ দেশের জনগণের দ্বন্দু আরো চরম হয়ে ওঠে।
শুরু হয় শাসকগোষ্ঠীর নানা ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। সেসব সংগ্রামে বাংলাদেশের গণমানুষের নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি তাঁকে ভালোবেসে ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তাঁকে 'জাতির পিতা' মর্যাদায় অভিষিক্ত করা হয়।
শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মঃ স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
পারিবারিক পরিচয়ঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও মাতার নাম সায়েরা খাতুন। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পিতা-মাতার তৃতীয় সন্তান। পারিবারিক আনন্দঘন পরিবেশে তাঁর শৈশব-কৈশোরের দিনগুলো টুঙ্গিপাড়ায় কাটে।
শিক্ষাজীবনঃ শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। গিমাডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুলে। তারপর তিনি গোপালগঞ্জ মিশন হাইস্কুলে ভর্তি হন। এ হাই স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন ১৯৪১ সালে। ম্যাট্রিক পাসের পর তিনি ভর্তি হন কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে। এ কলেজ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৪ সালে আই.এ এবং ১৯৪৭ সালে বি.এ পাস করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রসংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের মাধ্যমে ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান ও ১৫ই আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং আইন পড়ার জন্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৪৮ সালে গঠিত পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের তিনি ছিলেন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।
রাজনীতিতে প্রবেশ: শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জ মিশন হাইস্কুলে পড়ার সময় থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে এক সংবর্ধনা সভা শেষে ফিরে যাওয়ার সময় স্কুলের ছাত্রাবাস মেরামতের দাবি নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁদের পথরোধ করে দাঁড়িয়েছিলেন। স্কুলের ছাত্রাবাস ছিল জরাজীর্ণ। ছাত্রাবাস মেরামতের জন্যে অর্থ প্রয়োজন। শেরে বাংলা কিশোর মুজিবের সাহস ও স্পষ্ট বক্তব্য আর জনহিতৈষী মনোভাবের পরিচয় পেয়ে অবাক ও মুগ্ধ হন। তারপর হাসিমুখে জানতে চাইলেন, ছাত্রাবাস মেরামত করতে কত টাকা দরকার? শেখ মুজিবের কিশোর কণ্ঠে স্পষ্ট ভাষায় উচ্চারিত হলো- বারো'শ টাকা। শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক সাথে সাথে টাকার ব্যবস্থা করে দিলেন।
সক্রিয় রাজনীতিতে অল্পগ্রহণঃ ১৯৪৮ সালে গঠিত পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রণীদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হলে কারাবন্দি অবস্থায় তিনি দলের যুগ্ম সম্পাদকের পদ লাভ করেন। মুক্তি লাভের পর তিনি দল গঠনের কাজে নিয়োজিত হন। ১৯৫০ সালের জানুয়ারিতে তাঁকে আবার গ্রেফতার করা হয়। ১৯৫২ সালের ৯২৫ ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি জেলে অনশন ধর্মঘট পালন করেন। ১৯৯৩ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত হয় প্রাদেশিক নির্বাচন। শেখ মুজিবুর রহমান যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য। নির্বাচিত হন। যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় তিনি মন্ত্রিত্ব লাভ করেন। এদেশের মানুষের অধিকার আদায় এবং শোষণ নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি বারবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন। সক্রিয় রাজনীতিতে এভাবেই তার ভূমিকা শুরু হয়।
ছয়-দফা পেশঃ বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালে বাঙালি জাতির ঐতিহাসিক মুক্তির সনদ ৬ দফা পেশ করেন। এটি করার কারণে পাকিস্তান সরকার তাঁর ওপর ক্ষুদ্ধ হয় এবং তাঁকে প্রধান আসামি করে দায়ের করা হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। কিন্তু আন্দোলনের মুখে সরকার তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
বঙ্গবন্ধু উপাধিঃ ১৯৬৯ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি ছাত্রসপ্তাম পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত রেসকোর্স ময়দানে এক নাগরিক সংবর্ধনায় শেখ মুজিবুর রহমানকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
অসহযোগ আন্দোলনের ডাকঃ ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সমগ্র পাকিস্তানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। উল্লেখ্য যে, এই নির্বাচনে পাকিস্তানের সর্বমোট আসন সংখ্যা ছিল ৩০০টি। জনসংখ্যার ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আসন বরাদ্দ হয় ১৬৯টি। তার মধ্যে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর দল ১৬৭টি আসনে জয়লাভ করে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন এবং পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে ৩১০টি আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনে জয়লাভ করে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গণমানুষের ম্যান্ডেট লাভ করেন।
বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা রচনা pdf পাসওয়ার্ডঃ probdnews24
কিন্তু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের সুযোগ না দিয়ে ১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্যে স্থগিত ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩রা মার্চ অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। অবস্থা বেগতিক দেখে ইয়াহিয়া খান ২৫শে মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন।
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ঘোষণাঃ ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক ঐতিহাসিক জনসভার আয়োজন করা হয়। স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। তিনি সংসদ অধিবেশনে যোগদানের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার উদ্দেশে ৪ দফা শর্ত আরোপ করেন। শর্তগুলো ছিল- ১. সামরিক আইন (মার্শাল ল) তুলে নিতে হবে, ২. সামরিক বাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে, ৩. যে সকল বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছে, তাদের ব্যাপারে তদন্ত করতে হবে এবং ৪. জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সেদিন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের শেষ ঘোষণা ছিল, 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।'
স্বাধীনতা ঘোষণাঃ ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘুমন্ত নিরস্ত্র নিরপরাধ বাঙালির উপর। শুরু করে ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড। ২৫শে মার্চ মধ্যরাত শেষে অর্থাৎ ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর হমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এ ঘোষণার পরেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে কারাগারে বন্দি করা হয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
সরকার গঠনঃ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবর্তমানে তাঁকে রাষ্ট্রপতি করে ভাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ভারতে গঠিত হয় অস্থায়ী প্রবাসী সরকার। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধশেষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্য উদিত হয়। ১৬ই ডিসেম্বর বাঙালির বিজয় সূচিত হয়।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণঃ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বাধীনতা ঘোষণার পর থেকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পুরো সময় পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। তিনি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি ষদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ১২ই জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।
শাহাদতবরণঃ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গতিশীল হয়ে ওঠে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত হায়েনার দল বঙ্গবন্ধুর সাফল্য ও বাঙালির উত্থানকে মেনে নিতে পারেনি। তারা নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। দেশ যখন সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন তিনি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্তের শিকার হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সামরিক বাহিনীর তৎকালীন কিছু উচ্চাভিলাষী ও বিপথগামী সৈনিকের হাতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শাহাদতবরণ করেন। শারীরিকভাবে শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু হলেও তিনি জাতির হৃদয়ে অমর, অক্ষয় হয়ে আছেন।
উপসংহারঃ বাংলাদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীনতার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা একটি নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাঙালি জাতির পিতা। তাঁর দূরদর্শী, বিচক্ষণ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে। তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। তাঁর আত্মত্যাগ জাতিকে মহান মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। 'বঙ্গবন্ধু' ও 'বাংলাদেশ' আজ সমগ্র বাঙালি জাতির কাছে এক ও অভিন্ন একটি নাম।
“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা
গৌরী মেঘনা বহমান,
ততদিন রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান।”